প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫
ফ্রান্সে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ‘ব্লক এভরিথিং’ (Bloquons tout) নামে একটি সামাজিক মাধ্যমে শুরু হওয়া নাগরিক আন্দোলনে সারা দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ-হাট-বন্দ এবং সংঘর্ষের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এই আন্দোলন গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ব্যাপক ধাক্কা দিয়ে কর্মসূচিতে পরিণত হয়।
** প্রধান ঘটনার সারসংক্ষেপ:**
প্রেসিডেন্ট **এমানুয়েল ম্যাক্রোঁয়ের নিশ্চিন্ত মিত্র, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করায় বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। এর আগের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে পরাজিত হন, যা রাজনৈতিক সংকট আরও তীব্র করে তোলে ।
এই আন্দোলন অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সরকারি ব্যয় হ্রাসের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে জন্ম নেয়, বিশেষ করে বাইরুর প্রস্তাবিত ২০২৬ সালের বাজেটে ৪৪ বিলিয়ন ইউরো সাশ্রয়ের পরিকল্পনা এবং সরকারি ছুটি বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে ।
বুধবারে আন্দোলনটি “দেশ জুড়ে আগুনের প্রদর্শনী ও অবস্থান কর্মসূচি” তে বদলে যায়—রাস্তায় টায়ার ও আবর্জনায় আগুন, যানবাহন চলাচল সীমিত, ট্রেনে বিঘ্ন, এবং পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয় ।
** পুলিশ মোতায়েন ও গ্রেফতার:**
সরকারের পক্ষ থেকে ৮০,০০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়, যা একটি “অসাধারণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা” হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ।
প্রথম কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়, যার মধ্যে শুধু প্যারিসেই ১৫৯ জন । তবে অন্যান্য উত্সে প্রায় ৩০০ জন গ্রেফতার — অন্তত ২৯৫ জন পর্যন্ত ।
আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “শুরুর কিছু সময়ে প্রায় ২০০ জন গ্রেফতার হয়েছে” ।
** সংঘর্ষ ও জলমগ্ন পরিস্থিতি:**
রাজধানী প্যারিস সহ মার্সেই, লিল, লিওঁ, বোর্দো, মন্টপেলিয়ে, এবং অন্য শহরগুলোতে ব্যাপক যান চলাচল ব্যাহত হয় ।
রেনেসে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে একটি বাসে আগুন ধরানো হয়; সাউথওয়েস্টে ট্রেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় ।
ফরাসি নিরাপত্তা বাহিনী ড্রোন, হেলিকপ্টার ও ট্যাংক সমর্থ নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে উত্তাল পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করতে—তবে আন্দোলনটির বিচ্ছিন্ন এবং অসংগঠিত প্রকৃতিগণ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করেছিল ।
** আন্দোলনের প্রকৃতি:**
“ব্লক এভরিথিং” আন্দোলনটি সামাজিক মাধ্যমে জন্ম নেয়, কোনো একটি সংগঠিত নেতা বা কেন্দ্র নেই; এটি স্বতন্ত্র, প্ল্যাটফর্ম-মুক্ত, “ইউলোহিত” আন্দোলন হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দুর্বার গতিতে ছড়িয়ে পড়ে ।
আন্দোলনের মূল দাবি হলো সরকারি ব্যয়ের হ্রাস, অবসর সংস্কার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কাটছাঁট প্রতিহত, এবং সমবেদনামূলক ন্যায়সম্পন্ন অর্থনীতি দাবি করা ।
এটি ২০১৮–১৯ সালের “ইয়েলো ভেস্ট” আন্দোলনের মতো চরম জন-চাপে এবং বাতিঘরের মতোভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা তুলনা করেছেন ।
** রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি:**
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেকর্নুর নিয়োগ হচ্ছে ম্যাক্রোঁর চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী মাত্র এক বছরে । এর ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আরো প্রশ্নবিদ্ধ।
রাষ্ট্রের ঋণ এবং বাজেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গভীর বিতর্ক এবং জনসাধারণের অসন্তোষ রাজনৈতিক চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে ।
সরকার এবং বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই আন্দোলন আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে অবরুদ্ধ অবকাঠামো, “প্রতিরক্ষা অবকাঠামো”তে হামলা, বা বিদেশি প্রচারণার ছত্রভঙ্গতা যেন দমনাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে ।
—
সারমর্ম
ফ্রান্সের রাজনৈতিক গহ্বর এই মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ—মানি austerity নিয়ে বিতর্ক, হঠাৎ সরকার পতন, এবং মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবীদের অসন্তোষের ভেতরে “ব্লক এভরিথিং” আন্দোলন একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এই আন্দোলন কেন্দ্রহীন, দক্ষিনায় অধ্যুষিত, কিন্তু দৃশ্যমান প্রভাব ফেলতে সক্ষম; ফল যে রাজনৈতিক দিক বদলে দিতে পারে, তা আর অপ্রত্যাশিত নয়।